কয়রায় গুচ্ছগ্রামে স্ব উদ্যোগে সবজি চাষে স্বচ্ছল হচ্ছেন বাসিন্দারা

 


কয়রায় গুচ্ছগ্রামে স্ব উদ্যোগে সবজি চাষে স্বচ্ছল হচ্ছেন বাসিন্দারা



জি এম রিয়াজুল আকবর 


কোন জায়গা জমি নেই। গুচ্ছগ্রামে ঘর ও সামান‌্য জায়গা পে‌য়ে সবজি লাগিয়েছি। ৪ ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করে। পানি, চাল, কাঠ, তরকারি, সবকিছু কিনে খেতে হয়। স্বামীর আয়ে ঠিকমত সংসার চলে না। তাই আ‌মি আ‌ঙ্গিনায় সব‌জি চাষ ক‌র‌ছি। এতে আমরা নিজেরা তরকারি খেতে পারছি, আবার কিছুটা বিক্রিও করছি। এখান থে‌কে বছরে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা আয় হয়। যা সংসারের পিছনে খরচ করি।


বুধবার সকালে খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মিনা খাতুন এ কথা বলেন। তার সবজি লাগানো দেখে পাশে মাহফুজা খাতুনও সবজি চাষ করে‌ছেন। মাহফুজা খাতুনও সংসারের চা‌হিদা মি‌টি‌য়ে বাজারে কিছুটা বিক্রি করছেন। এতে বছরে তার তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মাহফুজা।


সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাগালী গুচ্ছগ্রা‌মে ৮০ টি সেমি পাকা ঘর র‌য়ে‌ছে। এক‌টি পুকুর র‌য়ে‌ছে। মাছ চা‌ষের পাশাপা‌শি পুকু‌রের পা‌নি দি‌য়ে উপকার‌ভোগীরা তা‌দের আ‌ঙ্গিনায় বি‌ভিন্ন সব‌জি চাষ কর‌ছেন। সেখানে অর্ধশতাধিক পরিবারের দেখা মেলে। তন্মাধ্যে ১০ থেকে ১২ জন সবজি চাষ করে পা‌রিবা‌রিক চা‌হিদা পূর‌ণের পাশাপা‌শি বিক্রি করছেন। আবার কেউ কেউ নতুন করে সবজি লাগানোর জন্য মাঠ প্রস্তুত করছেন। নারীরা নিজ আ‌ঙ্গিনায় এই সবজি চাষ কর‌ছেন। তারা বলেন, আমা‌দের‌কে গুচ্ছগ্রা‌মে বসবা‌সের সু‌যোগ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কা‌ছে কৃতজ্ঞ। মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের পাশাপা‌শি এক টুক‌রো জ‌মি পাওয়ায় সব‌জি চাষ কর‌তে পার‌ছি। আমরা নিজেদের উদ্যোগে এই সবজি চাষ করছি। কৃষি অফিস কিংবা  এনজিও সংস্থা তাদের পাশে এসে দাঁড়ালে আরও ভালোভাবে সকলেই সবজি চাষ করতে পারতেন বলে জানান তারা। 


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একই উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোবরা গ্রামের  গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারাও তাদের আঙ্গিনায় সবজি চাষ করছেন। তবে তাদের অভিযোগ অপরিকল্পিতভা‌বে কপোতাক্ষ নদীর চরে গুচ্ছ গ্রাম তৈরি করায় জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে প্রতিনিয়ত নষ্ট হয় তাদের সবজি বাগান। গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি স্থানীয় প্রশাসন বাউন্ডারি বাঁধ নির্মাণ করে লোনা পানি আটকিয়ে এবং কৃষি অফিস সহযোগিতা করলে সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হবেন তারা।


গোবরা গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা মোছাঃ ছালেয়া খাতুন জানান, বাড়ির আঙিনায় মৌসুম ভিত্তিক সবজি চাষ শুরু করেন। পরিবারের তিন সদস্যের খাবারের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় বাজারে সবজি বিক্রি করে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছলতা ফিরেছে তার। সেই সাথে বিভিন্ন জাতের ফলাদি গাছও লাগিয়েছেন তিনি।


ইলা বিবি নামের এক বাসিন্দা বিভিন্ন জাতের ফলাদি গাছ লাগিয়েছেন। সেগুলো অনেক বড় হয়েছে। ফলাদি বৃক্ষের মাঝে সবজি লাগিয়ে তাদের দুই সদস্যের সারা বছরের সবজির চাহিদা মেটান। ময়না বিবি জানান,  সবজি চাষ করে চার সদস্য পরিবারের চাহিদা মিটাচ্ছেন। 


তবে কয়রা উপজেলার শেওড়া ও মালিখালী গুচ্ছগ্রামে যেয়ে ভিন্নচিত্রের দেখা মেলে। শেওড়া গুচ্ছগ্রামের অধিকাংশ ঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেখানে কপোতাক্ষ নদের পানিতে আঙ্গিনার বালি ধুয়ে নিচু হয়ে গেছে। নদীর পানি রক্ষার বাঁধ জরার্জীণ হওয়ায় জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেলেই আঙ্গিনা ডুবে যায়। ৬০টি ঘরের মধ্যে মাত্র ১০/১২টি ঘরে  উপকারভোগীরা বসবাস করছেন । নাগরিক সুবিধা না থাকায় বাকীরা অন্যত্র চলে গেছেন। আর মালিখালী গুচ্ছগ্রামে একশটি ঘর রয়েছে। পরিবেশও খুব সুন্দর। তবে মিঠা পানির সংকটে ইচ্ছা থাকার পরেও কোন সবজি চাষ করতে পারছেন না বলে জানান সেখানকার বাসিন্দারা।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) অসীম কুমার দাস বলেন, গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা যে সবজি চাষ করছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। পরবর্তীতে পুষ্টি বাগান প্রকল্প আসলে তাদেরকে আওতাভুক্ত করা হবে এবং বীজ ও জৈব সার দিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে। বালু মাটিতে কিছুটা জৈব সার দিয়ে চাষ করলে ফলন আরো ভালো হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা ২০২০ সালে গুচ্ছগ্রামের বেশ কয়েকজনকে পুষ্টি বাগান প্রকল্পের আওতায় সহায়তা করেছিলাম।


এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মামুনুর রহমান বলেন, গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা স্ব উদ্যোগে তাদের আঙিনায় যে সবজি চাষ করছেন এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে এক বিন্দু পরিমাণ জায়গাও যাতে ফেলে দেখা না হয়। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদেরকে কৃষির উপরে গুরুত্ব দিতে হবে। আমি এখানে নতুন এসেছি। কিছুদিনের মধ্যেই গুচ্ছগ্রামগুলো পরিদর্শন করে তাদের জীবন মান উন্নয়নে সহয়তা করা হবে।

Comments

Popular posts from this blog

চাঁদপুরে জাতীয় দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠিত।

বৃক্ষরোপণ অভিযান'২৩ উপলক্ষ্যে গাছের চারা রোপণ ও বিতরণ কর্মসূচি পালন করেসুরতরী সাহিত্যে সাংস্কৃতিক সংসদ, চট্টগ্রাম।

সোনাকান্দা জলকেল্লা